৭ আগস্ট ২০২৩ এসইওতে নতুন মেট্রিক চালু করলো MOZ। যদিও এটা শুধুমাত্র বেটা ভার্সনে আছে মানে ফুল রিলিজ হয়নি। এটা এখন শুধুমাত্র USA এর জান্য রিলিজ করেছে।
আমরা আগেই জানি ডোমেইন অথোরিটি, পেজ অথোরিটি ও স্প্যাম স্কোর নামে MOZ এর বেশ কিছু মেট্রিকস ছিল। এর সাথে তারা এখন এই নতুন মেট্রিকটি যুক্ত করেছে। এসইও নিয়ে কাজ করেন এমন অনেকেরই এখন এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে ব্র্যান্ড অথোরিটি আসলে কি? এটা কিভাবে কাজ করে? এটা কি গুগলের কোন র্যাংকিং ফ্যাক্টর? কিভাবে আমাদের ওয়েবসাইটের ব্র্যান্ড অথোরিটি বৃদ্ধি করতে পারি? এই সব প্রশ্নের উত্তর থাকবে আজকের ব্লগে।
ব্র্যান্ড অথোরিটি™ হল একটি MOZ-এক্সক্লুসিভ মেট্রিক যা 1 থেকে 100 স্কেলে ব্র্যান্ডকে পরিমাপ করে।
এখন কথা হচ্ছে, এসইও এর সাথে ব্র্যান্ড অথোরিটির সম্পর্ক কি?
আমরা সার্চ ইঞ্জিনে এমন অনেক কিওয়ার্ড পাই যেগুলো সম্পূর্ণভাবে একটা ব্র্যান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন “Pixel Phone” এটা লিখে কেউ সার্চ করলে অবশ্যই এখানে ব্র্যান্ড বলতে “Google” কে বুঝাবে। তেমনিভাবে “I-Phone” বা “Macbook” লিখে সার্চ করলে অবশ্যই Apple কে ব্র্যান্ড হিসেবে বুঝাবে।
একটু লক্ষ্য করে দেখুন, শুধুমাত্র Google বা Apple নিজেদের স্টোরে ডিভাইসগুলো বিক্রি করেনা। অসংখ্য ই-কমার্স শপেও কিন্তু এই ডিভাইসগুলো পাওয়া যায়। যেমন, Amazon, E-bay, Walmart এ কিন্তু ডিভাইসগুলো আছে। ধরে নিলাম, Amazon, E-bay, Walmart সর্বোচ্চ ভালোভাবে এসইও করেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে Pixel Phone লিখে সার্চ করলে কে র্যাংক করবে? ই-কমার্স স্টোরগুলো নাকি Google? Macbook লিখে সার্চ করলে কে র্যাংক করবে? ই-কমার্স স্টোরগুলো নাকি Apple?
আপনি অবশ্যই উত্তর পেয়ে গেছেন, Pixel Phone লিখে সার্চ করলে অবশ্যই Google কে পাবেন কিংবা Macbook লিখে সার্চ করলে Apple এর ওয়েবসাইটই আগে পাবেন। এর কারণও পরিস্কার কারণ এগুলো তাদের ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট।
তাহলে, একথা পরিস্কার যে, সার্চ ইঞ্জিনগুলো র্যাংকিং দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই যে ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট এই ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইটকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। এখানে কে ভালো এসইও করলো সেটা মূখ্য বিষয় নয়।
MOZ কিভাবে ব্র্যান্ড অথোরিটি ক্যালকুলেট করে ?
ব্র্যান্ড অথোরিটি ক্যালকুলেট করতে MOZ দুটো বিষয়ে দেখে থাকে এক নাম্বার হচ্ছে কিওয়ার্ড ইনটেন্ট অপরটি হচ্ছে কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম। এখন আমরা যদি চিন্তা করি একটি ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অথোরিটি কত হবে তবে আমাদের দেখতে হবে সেই ব্রান্ডটিকে ইউজাররা কোন ধরনের কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করছে। যেমন, যদি ঐ ওয়েবসাইটকে তার ব্র্যান্ডেড কিওয়ার্ড দিয়ে বেশি বেশি সার্চ করা হয় এবং তার ব্র্যান্ডেড কিওয়ার্ডগুলোর সার্চ ভলিউম যদি বেশি হয় তবে সেই ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়বে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি Samsung এর বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিংবা বিভিন্ন সার্ভিস কিংবা বিভিন্ন প্রোডাক্টের মডেল নাম্বার দিয়ে সার্চ করে থাকে এর মানে ঐ ব্যক্তি স্যামসাংয়ের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে চাচ্ছেন। এখন এই কিওয়ার্ডগুলোর ইন্টেন্ট যদি হয় Samsung এর ওয়েবসাইট কে খুঁজে পাওয়া এবং সেই কিওয়ার্ড গুলোর সার্চ ভলিউম যদি বেশি হয় তবে অবশ্যই Samsung এর ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়বে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন আপনি হয়তো আপনার ওয়েবসাইটে অনেক বেশি ভিজিটর পাচ্ছেন কিন্তু সেই ভিজিটরগুলো যদি আপনার ব্র্যান্ড কিওয়ার্ডগুলো দিয়ে না আসে তবে আপনার ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়বে না। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারলাম, যে কিওয়ার্ডগুলো দ্বারা ভিজিটররা শুধুমাত্র কিছু ইনফরমেশন জেনে যাচ্ছে কিন্তু আপনার ওয়েবসাইটকে ব্র্যান্ড কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করছে না তবে আপনার ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়বে না।
ডোমেইন অথোরিটির মতো ব্র্যান্ড অথোরিটিও MOZ এক থেকে একশোর মধ্যে ক্যালকুলেট করে থাকে। যে ওয়েবসাইটটিকে ইউজাররা বেশি বেশি ব্র্যান্ড কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে এবং তাদের সার্চ ভলিউম যদি বেশি হয় তবে কেউ ওয়েবসাইটটির অথোরিটি অবশ্যই বাড়বে।
ব্র্যান্ড অথোরিটি কিভাবে চেক করব?
আমরা আগেই বলেছি, MOZ এখনো ব্র্যান্ড অথোরিটিকে বেটা ভার্সনে রেখেছে এবং এটি শুধুমাত্র USA এর পার্সপেক্টিভে তৈরি করা। ব্র্যান্ড অথোরিটি চেক করার জন্য আমাদের MOZ প্রো ইউজ করতে হবে, MOZ ফ্রি ভার্সনে ব্র্যান্ড অথোরিটি চেক করা যাবে না।
ব্র্যান্ড অথোরিটি কিভাবে বাড়ানো যায়?
বলে রাখা ভালো ব্র্যান্ড অথোরিটি একদিনে বাড়ানো সম্ভব নয়। আপনি যত বেশি Digital PR (Digital Public Relations) করবেন ততই আপনার ব্র্যান্ডের কিওয়ার্ডগুলো বাড়বে। যেমন আপনার কোম্পানির নতুন একটি প্রোডাক্ট যখন আসলো তখন সেই প্রোডাক্ট নিয়ে অবশ্যই ইউজার গুগলে সার্চ করবে সেই প্রোডাক্টটি কিন্তু আপনার ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে। যার ফলে আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়বে।
যারা শুধুমাত্র ব্লগিং করি তারা কিভাবে ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়াতে পারি?
যারা শুধুমাত্র ব্লগিং করে থাকি কিন্তু আমাদের নিজস্ব কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নেই তাদের জন্য ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়ানো বেশ কঠিন। সেক্ষেত্রে আমরা অনেকেই মনে করতে পারি, হয়তো বড় বড় কোম্পানির ব্লগের সাথে একজন ফ্রিল্যান্স ব্লগারের ব্লগ হয়তো টিকতে পারবেনা। হ্যাঁ, সেটা কিছুটা সত্যি অবশ্যই।
তবে শুধু ব্লগিং ফোকাস সাইটগুলো কি করবে? তারা যেটা করতে পারে সেটা হচ্ছে ChatGPT এর সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের টুল তৈরি করতে পারে। যেমন বিভিন্ন ধরনের কনভারটার টুল (Converter Tool)। আপনার সাইটে যখন এই ধরনের টুলগুলো থাকবে তখন ইউজাররা আপনার সাইটের নাম প্লাস টুলের নাম লিখে অনেক ক্ষেত্রে সার্চ করতে পারে। আপনি চাইলে আপনার ব্লগে এরকম কিছু টুল এড করতে পারেন, যেগুলো আপনার সাইটের নাম প্লাস টুলেরর নাম সহ ইউজার সার্চ করবে।
যেমন ধরে নিলাম আপনি একটা টুল বানিয়েছেন কিলোমিটার টু মাইল কনভার্টার। এখন ইউজাররা যদি সার্চ করে আপনার সাইটের নাম প্লাস টুলের নাম, এর মানে ইউজাররা আপনার সাইটে এসে আপনার টুলটি ইউজ করতে চাচ্ছে। এতে করে আপনার সাইটের ব্র্যান্ড অথোরিটি বাড়বে।
কিংবা আপনাদের মাথায় যদি এমন কিছু আইডিয়া আসে যার ফলে আপনি আপনার সাইটের নাম ইউজারকে দিয়ে সার্চ করাতে পারবেন তখন কিন্তু আপনার সাইটের ব্র্যান্ড স্কোর বেড়ে যাবে। তাহলে সেটি কিভাবে আরো কার্যকর ভাবে করা যায় সেজন্য আমরা ব্রেনস্ট্রম করতেই পারি।
ব্র্যান্ড অথোরিটি কি কোন র্যাংকিং ফ্যাক্টর?
এক কথায় উত্তর হচ্ছে না। তাহলে ব্র্যান্ড অথোরিটি নিয়ে মাথা ঘামানোর কি আছে? আসলে ranking সাথে ব্র্যান্ডের একটি পরোক্ষ সম্পর্ক আছে। যেমন, আমরা যখন লিঙ্ক বিল্ডিং করি তখন অনেক ধরনের লিংক ব্র্যান্ড কিওয়ার্ডে আমাদের সাইটে আসে। এর মানে ঐ কিওয়ার্ডে আমাদের সাইটের অথোরিটি নির্দেশ করে। আর ব্র্যান্ড কিওয়ার্ডের কথা আগে তো আলোচনা করলামই।
পরিশেষে বলি, আপাতত ব্র্যান্ড স্কোর রাতারাতি কিছু চেঞ্জ করে ফেলবে না, কারণ এটা শুধুমাত্র MOZ এর মেট্রিক। যদিও এর সাথে র্যাংকিং এর পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। হয়তো অতি দ্রুত Google ব্র্যান্ডকে র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্ব দিবে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, নিজস্ব প্রোডাক্ট বা সার্ভিস রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোই বেশি লাভবান হবে। সেক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্স ব্লগারদের সামনে কিছুটা চ্যালেঞ্জ বাড়বে।
0 Comments