৪ই মে ২০২০ সালে গুগল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের একটি কোর এলগোরিদম আপডেটের ঘোষণা দেয় তাদের অফিসিয়াল টুইটার একাউন্টে। এই কোর এলগোরিদম আপডেটের ফলে বেশ কিছু ওয়েবসাইট ব্যাপকভাবে ভিজিটর হারায় ও সার্চ ইঞ্জিনের র্যাংকিং থেকে নিচে নেমে যায়। আবার অপরদিকে বেশ কিছু ওয়েবসাইট রাতারাতি গুগলের প্রথম পেজে স্থান পেয়ে যায়।
কেন র্যাংকিং এ এত রদবদল? এই প্রশ্ন এখন সব মার্কেটারদের মুখে মুখে। তাহলে চলুন জেনে নেই গুগল কোর এলগোরিদম আপডেট মে ২০২০ নিয়ে।
গুগল কোর এলগোরিদম আপডেট কি?
বছরের ভিন্ন ভিন্ন সময় গুগল কিছু আপডেট নিয়ে আসে তার এলগোরিদমে, কিন্তু কিছু আপডেট আছে যার আওতা ব্যাপক ও সার্চ রেজাল্টে বিশাল পরিবর্তন আনে তাকে কোর এলগোরিদম আপডেট বলে। সম্প্রতি যে আপডেটটি প্রকাশিত হলো সেটি একটি কোর এলগোরিদম আপডেট। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-
– কোর আপডেট নির্দিষ্ট কোন ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট বা নির্দিষ্ট কোন দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। বরং সকল দেশের সকল ভাষার সকল ক্যাটাগরির ওয়েবসাইটের জন্য প্রযোজ্য হবে।
– কোর আপডেট বাস্তবায়িত হওয়ার সাথে সাথেই অটোমেটিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট র্যাংক করবে ও অনেকে র্যাংক হারাবে।
– পরবর্তীতে র্যাংক পেতে হলে কোর আপডেটের গাইডলাইন মেনে চলতে হবে।
কি আছে এই গুগল কোর এলগোরিদম আপডেটে?
প্রাসঙ্গিকভাবে বলে রাখা উচিত এই কোর এলগোরিদম আপডেট ৪ই মে ২০২০ সালে প্রকাশিত হলেও এটি পূর্বে থেকেই গুগলের একটি গাইডলাইন হিসেবে ছিল। উক্ত গাইডলাইনটি গুগল প্রকাশ করেছিল ১লা আগস্ট ২০১৯ সালে। এতএব আমরা বুঝতে পারছি, এই গাইডলাইনটি পূর্বে থেকেই বহাল ছিল কিন্তু এটিকে গুগুল এলগোরিদম হিসেবে নেয়নি সেই মুহূর্তে। মে ২০২০ কোর এলগোরিদম আপডেটের ফলে গুগল এই গাইডলাইনকেই এলগোরিদম হিসেবে ঘোষণা দেয়। চলুন জেনে সেই সেই গাইডলাইনে কি আছে-
কন্টেন্টকে গুরুত্ব দিতে হবে
যারা কন্টেন্টে গুরুত্ব দিয়েছে তাদেরকেই গুগল পুরস্কৃত করেছে। অর্থাৎ যাদের র্যাংক পতন হয়েছে গুগল তাদের পুনরায় র্যাংক করার জন্য কন্টন্টে প্রাসঙ্গিকতা চায়। কন্টেন্ট ভালভাবে সাজাতে হলে বেশ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে গুগলের গাইডলাইনে যা এখন গুগল কোর এলগোরিদম আপডেট।
চারটি ক্যাটাগরিতে গুগল কন্টেন্টকে প্রশ্নবোধক দিয়েছে, সেগুলো হলো
১। কনটেন্টের মান সম্পর্কিত প্রশ্ন
– আপনার কন্টেন্টে পর্যাপ্ত তথ্য, রিসার্চ, রিপোর্ট ও বিশ্লেষন বিদ্যমান কিনা?
– যে বিষয়ের উপর কন্টেন্ট লিখেছেন সে বিষয়টি কি কন্টেন্টে সম্পূর্ণ ও বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে?
– যেসব ওয়েবসাইট থেকে কন্টেন্ট এর তথ্য নিয়েছেন তাদেরকে কি রেফারেন্স দিয়েছেন নাকি কপি পেস্ট বা আর্টিকেল পুনলিখন (Rewrite) করেছেন?
– আপনার টাইটেল ও মেটা ডেসক্রিপশন কি কন্টেন্টের সারাংশ তুলে ধরতে পেরেছে?
– আপনার টাইটেল বা মেটা ডেসক্রিপশন অতিরঞ্জিত ও হতবাক করার মত করেননি তো?
– আপনার পেজ কি মানুষ বুকমার্ক বা শেয়ার করতে ইচ্ছুক?
– আপনার কন্টেন্ট কি বিভিন্ন এনসাইক্লোপিডিয়া বা বইয়ের মধ্যে রেফারেন্সের পাওয়ার যোগ্যতা রাখে?
২। দক্ষতা বিষয়ক প্রশ্ন
– আপনার কন্টেন্ট কি মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য? এটি কি সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ প্রদান করে?
– আপনার ওয়েবসাইট কেউ ভিজিট করলে তিনি কি সকল তথ্যে বিশ্বস্ততার সাথে গ্রহণ করবে?
– কন্টেন্ট লেখক যে বিষয়ে লিখেছে সে বিষয়ে কি তিনি ভাল জ্ঞান রাখেন?
– ওয়েসবাইটের কন্টেন্টকি মিথ্যা বা ভুল তথ্য থেকে মুক্ত?
– আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের উপর কি মানুষ আস্থা রাখতে পারবে?
৩। কন্টেন্ট উপস্থাপনা ও প্রস্তুত বিষয়ক প্রশ্ন
– ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট কি বানানগত বা ব্যকরণগত ভুল হতে মুক্ত?
– কন্টেন্ট কি পরিকল্পিতভাবে সাজনো হয়েছে নাকি তাড়াহুড়ো করে লিখা হয়েছে?
– অনেক লেখক অনেক কন্টেন্ট লিখেছেন ওয়েবসাইটে, ফলে ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ পেজ বিছিন্ন থেকে গেল নাতো?
– কন্টেন্টে কি প্রচুর বিজ্ঞাপন রয়েছে যেন মানুষ কন্টেন্ট পড়তে বিরক্তবোধ করে?
– কন্টেন্ট কি সকল ডিভাইসে (মোবাইল, ট্যাব) সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয় অর্থাৎ রেসপনসিভ?
৪। তুলনামূলক প্রশ্ন
– অন্যান্য পেজের সাথে তুলনা করলে আপনার কন্টেন্ট কি অধিক মুল্যবান?
– আপনার কন্টেন্ট কি ভিজিটরের প্রয়োজন পূর্ণ করতে লিখা হয়েছে নাকি সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক পাওয়ার জন্য লিখা হয়েছে?
আমরা এতক্ষন যে চারটি পয়েন্ট আলোচনা করলাম তা ছিল গুগলের গাইডলাইন যা বর্তমানে এলগোরিদম হিসেবে স্থান পেয়েছে। এই পয়েন্টগুলো আলোচনা করে আমরা বুঝতে পারছি গুগল র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কন্টেন্টকে। সার্চ ইঞ্জিন বিশেশজ্ঞরা সেজন্য বলে থাকেন Content is King বা কন্টেন্টই রাজা। জেনে নিন কন্টেন্ট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে।
ইএটি ক্রাইটেরিয়া (EAT Criteria)
গুগল এলগোরিদম আপডেট মার্চ ২০২০ এর অন্যন্য আরেকটি সংস্করন হলো ইএটি ক্রাইটেরিয়া (EAT Criteria) । ইএটি ক্রাইটেরিয়া (EAT Criteria) এখন র্যাংকিং ফ্যাক্টরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে। EAT এর পূর্ণরূপ হচ্ছে E = Expertise A = Authoritativeness and T = Trustworthiness.
Expertise (দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা)
এখানে Expertise (দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা) দ্বারা বুঝানো হচ্ছে যিনি কন্টেন্ট লিখছেন তার উক্ত বিষয়ের উপর কতটুকু দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা রয়েছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে বিষয়বস্তু সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান আছে কিনা।
Authoritativeness (প্রামান্যতা)
এখানে Authoritativeness (প্রামান্যতা) বলতে বুঝাচ্ছে আপনি যে বিষয়বস্তুর উপর ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন সে বিষয়ের উপর আপনার কর্তৃত্ব বা প্রামান্যতা আছে। আপনি আপনার বিষয়বস্তুর উপর কর্তৃত্ব রাখেন তা প্রমান হয় যখন বড় বড় ওয়েবসাইট আপনাকে রেফারেন্স দেয় (এক্সটারনাল লিংক দেয়) । এটা প্রমান করে আপনার ওয়েসবাইট ঐ বিষয়ের মূল তথ্যদাতা।
Trustworthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা)
যখন আপনার ওয়েবসাইট তথ্য প্রদান বা লেনদেনে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দেবে তখন তাকে Trustworthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা) বলা হয়। বিশেষ করে যেসব ওয়েবসাইটে আর্থিক লেনদেন হয় সেসব ওয়েবসাইটের জন্য Trustworthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা) সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে ই-কমার্স সাইটের জন্য Trustworthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। SSL certificate কোন ওয়েবসাইটে সংযুক্ত থাকা কোন ওয়েবসাইটের Trustworthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা) এর প্রমাণ বহন করে।
কে জিতলো কে হারলো?
গুগল কোর এলগোরিদম আপডেট মে ২০২০ এ সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে যারা তথ্যবহুল কন্টেন্ট নির্ভর ওয়েবসাইট করেছে। পাশাপাশি নতুন বিভিন্ন সাইট যারা দ্রুত র্যাংক পেয়েছিল তাদের ভিজিটর কমে গেছে ও র্যাংক পতন হয়েছে। সেক্ষত্রে গুগল পুরানো ডোমেইনকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। সেসব সাইট র্যাংক হারিয়েছে তাদের মধ্যে লোকাল সাইট, এফিলিয়েট সাইট ও ই-কমার্স সাইট বেশি। অপরদিকে হেলথ, এডুকেশন ও নিউজ সাইটগুলো বেশ লাভবান হয়েছে। যদিও ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ব্যাতিক্রম ঘটেছে। বস্তুত যাদের র্যাংক পতন হয়েছে তাদের ওয়েবসাইট মানসম্পন্ন নয় এমনটি ভাবা ঠিক নয়। এটা গুগলের এলগোরিদম আপডেটের ফলে র্যাংক পতন হয়েছে। কারা জিতলো ও কারা হারলো এই নিয়ে SEM Rush একটি সুন্দর রিপোর্ট করেছে।
তাহলে এখন কি করা উচিত?
এই দীর্ঘ আলোচনার পর আপনারা বুঝে গেছেন আপনাদের ওয়েবসাইটের কি করা উচিত? সংক্ষেপে পুরা বিষয়টা এক কথায় বললে “আপনার ওয়েবসাইট ও কন্টেন্টকে ভিজিটর ফ্রেন্ডলি করুন অটোমেটিক তা সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করবে” কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করতে গিয়ে ভিজিটর ফ্রেন্ডলি না করতে পারলে ওয়েবসাইট র্যাংক হারাবে। গুগলের নতুন এলগোরিদম আমাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে এখন থেকে সাইট র্যাংক করানো হবে আগের চেয়ে আরেকটু দীর্ঘমেয়াদি পক্রিয়া। গুগল কোর এলগোরিদম আপডেট এর ফলে আরো বুঝা যাচ্ছে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও এবার স্থান একদমই পাবে না।
পরিশেষে বলি
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন একটি কয়েক মাসের পক্রিয়া, কোন শর্টকাট ব্যবহার করে ওয়েবসাইটকে র্যাংক করানো যায় না। গুগল কোর এলগোরিদম আপডেট মে ২০২০ এর ফলে যারা দক্ষতা, অভিজ্ঞতা বা পরিশ্রম দিয়ে ওয়েবসাইট সাজিয়েছে তারাই পুরস্কৃত হলো। যাদের র্যাংক পতন রয়েছে তাদেরও অনুধাবণ করার সময় এসেছে আরো ভালো কন্টেন্ট তৈরি করে কি করে র্যাংক পাওয়া যায়। গুগলের আপডেটেড গাইডলাইনগুলো মেনে চলুন সাইট র্যাংক করবেই।
এই বিষয়ে আপনার মতামত বা প্রশ্ন নিঃসংকোচে আমাদের কমেন্ট করে জানান।
Nyc content
If you want to see your web page at the top of the Google search engine list then SEO experts can help you very much.
You may not have an idea about the benefits of an SEO expert and the benefits SEO can bring to your business. SEO experts can make your website top in the Google ranking.