ডোমাইন ও হোস্টিং বিষয়টা আসলে কি, এটা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে। অনেকেই জানতে চান কোন ধরণের ডোমেইন কেনা ভালো হবে। কিংবা হোস্টিং এর ক্ষেত্রে কোন ধরণের হোস্টিং ভালো স্পিড পাবে। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
ডোমেইন কি?
এক কথায় একটি ওয়েবসাইটের নামই হলো ডোমেইন। “Domain” হল একটি ইন্টারনেট ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ্লিকেশনের নাম। ডোমেইন নামটি ইংরেজী ওয়েব ঠিকানার ভিত্তিতে একটি আইপি ঠিকানা অনুযায়ী ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ্লিকেশনকে সম্পর্কিত করে। উদাহরণস্বরূপ, “google.com” facebook.com” “sheba.xyz” ইত্যাদি হলো একেকটি ডোমেইন নাম।
ডোমেইন কিনতে হলে প্রথমে একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে। এরপর ডোমেইন আপনাকে যেকোন প্রোভাইডার থেকে ডোমেইন ক্রয় করতে হবে। আপনি যদি ডোমেইন হোস্টিং কিনতে চান তবে নূন্যতম ২,০০০ টাকা খরচ করতে হবে।
ডোমেইন হতে পারে – (১) টপ লেভেল ডোমেইন (২) সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন (৩) থার্ড লেভেল ডোমেইন।
যেমন www.backenddigital.com এখানে (.com) হচ্ছে টপ লেভেল ডোমেইন, backenddigital হচ্ছে সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন এবং www হচ্ছে থার্ড লেভেল ডোমেইন।
বিভিন্ন ধরণের ডোমেইন এক্সটেনশনের মধ্যে রয়েছে –
.com
.org
.gov
.net
.xyz
.io
.ai
.edu ইত্যাদি।
কিং ডোমেইন
.com কে বলা হয় কিং ডোমেইন। অন্যান্য যেকোন ডোমেইন এক্সটেনশনের চেয়ে এই .com ডোমেইকেই এসইও এক্সপার্টরা বেশি পছন্দ করেন। কারণ একজন ইউজারের কাছে সবচেয়ে পরিচিত এক্সটেনশন হলো .com । ফলে অন্যান্য ডোমেইনের চেয়ে .com ডোমেইনের বেশি ক্লিক পড়ে।
এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন
এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন হচ্ছে সেই ডোমেইনগুলো যেগুলো প্রধান কিওয়ার্ডের সাথে মিলে যায়। যেমন আপনি যদি অনলাইনে হোটেল বুকিং এর সার্ভিস দিয়ে থাকেন এবং আপনার ডোমেইন হয় hotelbooking.com তাহলে এটি হচ্ছে এক্স্যাক্ট ম্যাচ ডোমেইন। এখানে আপনার কিওয়ার্ড ও ডোমেইন একসাথে মিলে গেছে। এক্স্যাক্ট ম্যাচ ডোমেইনে আপনি সার্চ রেজাল্টে সামান্য প্রাধান্য পাবেন শুধুমাত্র এক্স্যাক্ট কিওয়ার্ড (hotel booking) দিয়ে যখন সার্চ করা হয়।
ব্র্যান্ডেড ডোমেইন
২০২৩ সালের এসইও স্ট্র্যাটেজির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ব্র্যান্ডেড ডোমেইন নিয়ে কাজ করা। গুগল এখন ব্র্যান্ডেড ডোমেইনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে র্যাঙ্কিং এর জন্য। যেমন coderstrust.com একটি ব্র্যান্ড নেম ডোমেইন।
কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন
নির্দিষ্ট দেশে সার্চ রেজাল্টে কিছু অগ্রাধিকার পায় কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন। তবে গ্লোবাল টার্গেটে কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন ততটা কার্যকর নয়। কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন এর উদাহরণ হচ্ছে .com.bd (বাংলাদেশ), com.uk (ইংল্যান্ড), com.us (ইউএসএ) ইত্যাদি। যাদের বিজনেস শুধুমাত্র একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ তারা কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন নিয়ে কাজ করতে পারেন। বাংলাদেশে .com.bd ডোমেইন নিতে চাইলে সেটি অবশ্যই BTCL থেকে কিনতে হবে।
এক্সপায়ার্ড ডোমেইন
যেসব ডোমেইন আগে কেউ কিনেছিল কিন্তু বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে না সেসব ডোমেইনকে এক্সপায়ার্ড ডোমেইন বলা হয়। আপনি যদি ডোমেইন এর হিস্ট্রি চেক করে ডোমেইন নিতে পারেন তবে র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে খুবই এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু যদি আপনার কেনা এক্সপায়ার্ড ডোমেইনটি আগে গুগলের পেনাল্টি খেয়ে থাকে তবে আপনাকেও সেই পেলান্টি বহন করতে হবে।
হোস্টিং কি?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে হোস্টিং হচ্ছে স্টোরেস বা স্পেস যেখানে আমাদের ওয়েবসাইটের ডাটা স্টোর থাকে। যখন কোণ ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে আসে তখন আপনার ডাটা/ফাইলগুলো আপনার হোস্টিং থেকে লোড নেয়। আপনার হোস্টিং স্পিডের উপর অনেকাংশেই আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড নির্ভর করে। তাই ভালো হোস্টিং সিলেক্ট করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হোস্টিং এর প্রকারভেদ
- শেয়ার্ড হোস্টিং
- ক্লাউড হোস্টিং
- ভিপিএস হোস্টিং
- ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং
শেয়ার্ড হোস্টিং
শেয়ার্ড হোস্টিং কথাটা থেকেই বুঝা যাচ্ছে এই হোস্টিং ভিন্ন ভিন্ন মানুষের মধ্যে শেয়ার করা হয়। যেমন হোস্টিং প্রোভাইডার তার হোস্টিং থেকে বিভিন্ন ছোট ছোট অংশ ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারকারীর মধ্যে বিক্রি করে থাকে। যেমন তার হোস্টিং যদি হয় ১০০ জিবি তাহলে সেখান থেকে সে ২ জিবি/৫ জিবি/১০জিবি করে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহারকারীর মধ্যে বিক্রি করতে পারে। এখানে সব ব্যবহারকারীরা একসাথে এই ১০০ জিবি ভাগ ভাগ করে ব্যবহার করছেন।
সবচেয়ে সস্তা ওয়েব হোস্টিং হলো শেয়ার্ড হোস্টিং। যেহেতু একটা হোস্টিং অনেকেই ব্যবহার করে থাকে ফলে কমমূল্যে এই হোস্টিং পাওয়া যায়। সাধারণত ছোট সাইটগুলো এই ধরণের হোস্টিং ব্যবহার করে থাকে।
ক্লাউড হোস্টিং
ক্লাউড কথাটার মানেই হচ্ছে আমাদের সাইটের ডাটা কোন নির্দিষ্ট একটি হার্ডডিস্কে না রেখে একটা ভার্চুয়াল হোস্টিং এ স্টোর করে রাখা। যেমন আমরা একটা ভিডিও আমাদের পিসিতে রাখতে পারি বা গুগল ড্রাইভে রাখতে পারি। গুগল ড্রাইভে যদি রাখি তবে সেটাই ক্লাউডে সেভ করে রাখা। এখানে আমাদের পিসি হচ্ছে লোকাল হোস্ট ও গুগল ড্রাইভ হচ্ছে ক্লাউড হোস্ট।
ক্লাউড হোস্টিং এর ডাটা যেহেতু ক্লাউডে সংরক্ষিত হয়, ফলে নির্দিস্ট একটি ডাটা স্টেশনের সার্ভারের সমস্যা থাকলেও আমাদের সাইটের ডাটা অন্য সার্ভার থেকে ঠিকই লোড নিবে। এই ধরণের হোস্টিং একটি ব্যয়বহুল। সাধারণত মাঝারী ও বড় ওয়েবসাইটগুলো ক্লাউড হোস্টিং ব্যবহার করে থাকে।
ভিপিএস হোস্টিং
ভিপিএস হোস্টিং হল একটি ওয়েব হোস্টিং সেবা যা একটি নেটওয়ার্ক অথবা ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে হোস্টিং সার্ভারগুলি প্রদান করে থাকে। ভিপিএস হোস্টিং হল ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার হোস্টিং, যা ব্যবহারকারীদের সাথে একটি হোস্টিং সার্ভার ভাগ করে দেয় এবং প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য স্বতন্ত্র একটি ভার্চুয়াল সার্ভার সৃষ্টি করে।
এই প্রকারের হোস্টিংগুলি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা ভিত্তিতে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেমন সব ওয়েবসাইটের জন্য একটি স্বতন্ত্র সার্ভার প্রয়োজন নেই। বড় সাইট ও ভিজিটরের পরিমাণ বেশি হলে ভিপিএস হোস্টিং নেয়া ভালো। ভিপিএস হোস্টিং সাধারণত অনেক ফাস্ট হয়ে থাকে এবং ক্লাউডে আপনার ফাইলগুলো সরংক্ষিত থাকে।
ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং
ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং হল ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটকে হোস্ট করার জন্য একটি হোস্টিং সেবা। ওয়ার্ডপ্রেস একটি পরিচিত ওয়েবসাইট প্ল্যাটফর্ম যা একটি ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে শুরু হয়। কিন্তু এখন ওয়ার্ডপ্রেস প্রায় সব ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং এর ইনস্টলেশন খুবই সহজ । এটি নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত যারা ওয়ার্ডপ্রেসে দক্ষ নন। শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেসকে টার্গেট করেই এই হোস্টিং বানানো।
জনপ্রিয় কিছু ডোমেইন হোস্টিং প্রভাইডার
গ্লোবালি –
- Namecheap
- Hostinger
- Bluehost
- HostGator ইত্যাদি
বাংলাদেশে-
- Exon Host
- Hostever
- DianaHost
- Hosting Bangladesh ইত্যাদি
পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট/ ছোট বিজনেসের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং কি যথেস্ট?
হ্যাঁ, পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট/ ছোট বিজনেসের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং নেওয়া যায়। সাধারণত ওয়েবসাইটের স্পিড শুধুমাত্র হোস্টিং এর উপর নির্ভর করে না। ওয়েবসাইটের স্পিড অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমেও সাইটের স্পিড বাড়ানো যায়।
পরিশেষে বলি
সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে, ডোমেইন ও হোস্টিং হলো ওয়েবসাইট তৈরি এবং প্রকাশের দুটি প্রধান উপাদান। ডোমেইন হলো ওয়েবসাইটের ঠিকানা এবং হোস্টিং হলো ওয়েবসাইটের ফাইল স্টোরেজ স্পেস এবং অনলাইন একটি সার্ভারের মাধ্যমে ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করা।
0 Comments