যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করার আগে আপানকে জানতে হবে সেই সোশ্যাল মিডিয়ার এলগোরিদম (বিধিবিধান) কি। ঠিক তেমনি ফেসবুক মার্কেটিং করার আগে আপনাকে খুব ভালভাবে জানতে হবে ফেসবুকের এলগোরিদম সম্পর্কে। ডিজিটাল মার্কেটিং জানতে হলে ফেসবুক মার্কেটিং জানা আবশ্যক।
অর্থাৎ আপনাকে জানতে হবে-
- বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট যেমন ফেসবুক লাইভ, ভিডিও, ইমেজ, টেক্সট বেশি রিচ হয়।
- লাইক-কমেন্ট-শেয়ার-ম্যাসেজ-কল টু একশন কোনটি আপনার পোস্টের জন্য বেশি প্রয়োজন।
- কোন ধরণের এড পাবলিশ করা ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ।
- ফেসবুক আইডি এবং ফেসবুক পেজ এর মধ্যে কোনটার পোস্ট বেশি রিচ হয়।
অর্থাৎ আপনি যদি ফেসবুকের এলগোরিদম মেনে মার্কেটিং করতে পারেন তবে ভাল রিচ পাবেন ও আপনার সেলস বাড়বে।
নিউজ ফিড অ্যালগরিদম
ফেসবুকে কার নিউজফিডে কোন পোস্ট প্রদর্শিত হবে এটা একটা অ্যালগারিদম মেইনটেইন করে চলে, যেটাকে EDGE Rank বলে। আর এ অ্যালগারিদমের কারনেই সবার সব পোস্ট দেখা যায় না। আপনি হয়তো অসংখ্য পেজে লাইক দিয়েছেন বা গ্রুপে এড হয়েছেন বা আপনার লিস্টে অনেক ফ্রেন্ড আছে কিন্ত সবার সব পোস্ট আপনি দেখেন না বা অন্যরাও আপনার সব পোস্ট দেখে না।
ফেসবুকের বেশ পুরানো তিনটা এলগোরিদম হল Affinity, Weight এবং Time decay চলুন এই তিনটা এলগোরিদম সম্পর্কে জেনে নিই।
Affinity (সম্পর্ক):
Affinity হচ্ছে আপনার ফেসবুক পোস্টের সাথে ব্যবহারকারীর রিয়েকশন। আপনার পোস্টে তারা কি পরিমাণ লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে। যিনি আপনার পোস্টে বারবার লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবে তার নিউজফিডে আপানার পোস্তগুলো বারবার প্রদর্শিত হবে। অপরদিকে যিনি আপনার পোস্টে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করবে না তার নিউজফিডে আপনার পোস্ট আসার সম্ভবনা কমে যাবে, যদিও তিনি আপনার পেজকে লাইক দিয়ে রেখেছেন। সেজন্য যারা “See First” করে রাখবে পেজে তারা নিয়মিত সবগুলো পোস্ট পাবেন।
Weight / Type of Content (কন্টেনের ধরণ):
Weight হলো আপনি কি ধরণের পোস্ট ফেসবুকে করছেন, হতে পারে সেটি ইমেজ, টেক্সট, ভিডিও। সেক্ষেত্রে ফেসবুকের নিউজফিডে ক্রমান্বয়ে বেশি প্রদর্শিত হয় যথাক্রমে-
– ফেসবুক লাইভ
– ভিডিও
– ইমেজ
– টেক্সট
এখানে উল্লেখ্য, ফেসবুকে আপলোড করা ইমেজ, টেক্সট, ভিডিও ছাড়া যদি অন্য কোন ওয়েবসাইটের যদি লিংক শেয়ার করা হয় (যেমন ইউটিউব ভিডিও লিংক) তবে রিচ কম হবে।
এবার আসি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, ক্লিক কোনটির (Weight) কেমন। যথক্রমে বেশি থেকে কম
– শেয়ার
– কমেন্ট
– লাইক
– ক্লিক
অর্থাৎ যিনি আপনার পোস্ট শেয়ার করবেন তার নিউজফিডে আপনার পরবর্তী পোস্টগুলো প্রদর্শিত হওয়ার চান্স সবচেয়ে বেশি। তারপর যথক্রমে কমেন্ট, লাইক ও ক্লিক (যেমন ছবিতে ক্লিক করা)।
Time Decay (সময়ের অবস্থান):
Time Decay হচ্ছে আপনার পোস্টটি কতক্ষণ একটি নিউজফিডে প্রদর্শিত হবে এবং আপনি পেজে লাস্ট পোস্টটি কখন করেছিলেন। অর্থাৎ পোস্ট যত পুরানো হবে তত কম ব্যবহারকারীদের নিউজফিডে প্রদর্শিত হবে।
এবার আসুন জেনে নিই কিভাবে ফেসবুকের এলগোরিদম মেনে পোস্ট করলে বেশি রিচ পাওয়া যাবে।
১। ট্রেন্ডিং বা চলমান টপিকগুলোর পোস্ট করুন
ট্রেন্ডিং বা চলমান টপিকগুলোর পোস্ট বেশি রিচ হয়। সেক্ষেত্রে হ্যাশট্যাগ একটি কার্যকর ইন্ডিকেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২। সেই সময়ে পোস্ট করুন যখন আপনার ব্যবহারকারীরা অনলাইনে বেশি একটিভ
যেমন ধরুন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি ফেসবুকে একটিভ থাকে তাই তখন পোস্ট করলে পোস্টের রিচ বেড়ে যাবে। কিন্তু আপনার পোস্টটি যদি B2B (বিজনেস টু বিজনেস) হয় তাহলে সকার ১১ টা থেকে বিকাল ৪ টার মধ্যে পোস্ট করা ভালো। কারন এই সময়ে সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলা থাকে। তবে বন্ধের দিন এড রান না করাই ভাল।
৩। এমন কন্টেন্ট কখনও পোস্ট করবেন না যা আপনাকে নিচে নামবে
- · পোস্টের টাইটেলের সাথে পোস্টের লিংকের কোন মিল নেই, এমন পোস্ট ফেসবুকের রিচ কমিয়ে দেয়।
- · বর্ডারলাইন কন্টেন্ট ( যেসব কন্টেন্ট আক্রমনাত্বক যদিও ফেসবুকে নিষিদ্ধ নয়) রিচ কমিয়ে দিবে।
- · ভুল তথ্য এবং ভুয়া নিউজ রিচ কমিয়ে দিবে।
৪। হাই কোয়ালিটি ভিডিও এবং ৩ মিনিটের বেশি ভিডিও পোস্ট করুন
- ব্যবহারকারীরা সার্চ করে এমন ভিডিও পোস্ট করুন।
- ভিডিও যেন অন্তত ৩ মিনিট হয়ে খেয়াল রাখুন।
- অন্য কারো পোস্ট করা ভিডিও পোস্ট করা থেকে বিরত থাকুন তবে রিচ বেশি হবে
৫। ধারাবাহিকভাবে নিয়মিত পোস্ট করুন
অনেকেই দেখা যায় ফেসবুক পেজে কখনো খুব বেশি পোস্ট করেন আবার কিছুদিন ইনেকটিভ হয়ে যান। সেক্ষত্রে আপনাকে নিয়মিত ও ধারাহাবিকভাবে পোস্ট করতে হবে। খুব বেশি বেশি পোস্ট করতে হবে ব্যপারটা এমন নয় তবে পোস্টের দীর্ঘবিরতি দেয়া উচিত নয়।
৬। প্রাসঙ্গিক গ্রুপে একটিভ থাকুন
- ফেসবুকের গ্রুপের রিচ অনেক বেশি হয়, সেক্ষত্রে প্রাসঙ্গিক গ্রুপে পোস্ট করা ও গ্রাহকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়া যায়।
৭। অডিয়েন্সের পছন্দ অনুযায়ী পোস্ট করুন
- সেই বিষয়গুলোতে পোস্ট করুন যা অডিয়েন্স সাবলীলভাবে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করে থাকে। গ্রাহকদের সাবলীল অংশগ্রহণ আপনার রিচ বহুগুণে বাড়িয়ে দিবে।
৮। সেই পোস্টটি বুস্ট করুন যার অরগানিক রিচ বেশি
- অরগানিক রিচ বলা হয় টাকা খরচ ছাড়া যে রিচ পাওয়া যায়। তাই আগে পোস্ট করে দেখুন ব্যবহারকারীদের থেকে কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন। যদি রেসপন্স ভালো হয় তবেই পোস্টটি বুস্ট করুন নয়তো ভালো রিচ পাবেন না।
তথ্যসূত্রঃ জানতে ক্লিক করুন- ফেসবুক এলগোরিদম ২০২০
পরিশেষে বলি
ফেসবুক এড ও মার্কেটিং একটি বিশাল আলোচনার বিষয়, অল্প পরিসরে সবকিছু উল্লেখ করা সম্ভব নয়। আপনারা মূল্যবান মতামত বা প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট বক্সে প্রদান করুন।
nice and masha allah useful website.
অনেক তথ্য বহুল ভাইয়া।ধন্যবাদ
Very helpful and crystal clear information.