অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
কমিশনের ভিত্তিতে কোন কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা বিক্রয় করে দেয়াকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়। যেমন বিশ্বব্যাপী Amazon, E-bay, Alibaba Express এমনকি বাংলাদেশের Daraz, Pickaboo, AjkerDeal ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের অ্যাফিলিয়েট হয়ে মার্কেটিং করেও কমিশন অর্জন করা যায়। বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর বাস্তবিক একটি প্রয়োগক্ষেত্র হলো অ্যাফিলিয়েট বা সম্বন্ধ মার্কেটিং।
অর্থাৎ পণ্য বা সার্ভিস আপনার না। অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা রেফার করে/সেল করে আপনিও কমিশন অর্জন করতে পারেন। আসলে এটাই এফিলিয়েট মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট বা সম্বন্ধ মার্কেটিং এর সুবিধা কি?
- অ্যাফিলিয়েট হয়ে মার্কেটিং এমন একটি পেশা যা আপনাকে শিখতে সহায়তা করবে, আয় করাবে এবং আপনাকে একাগ্রভাবে নিয়োজিত রাখবে।
- এটি খুবই স্বল্প ব্যয়ে শুরু করা যায়। তবে কন্টেন্ট নির্ভর এফিলিয়েট মার্কেটিং যেমন ইউটিউব/ব্লগের মাধ্যমে এফিলিয়েট করতে চাইলে আপনার ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন হবে।
- এটি একটি স্বাধীন পেশা, প্রতিদিন সময় দিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
- আয়ের কোন নির্দিষ্ট সিমা নেই, যত বেশি সেলস জেনারেট করতে পারবেন তত বেশি আয় করতে পারবেন।
- নিজের কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রয়োজন পড়ে না, অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রয় করে কমিশন পাওয়া যায়।
অ্যাফিলিয়েট বা সম্বন্ধ মার্কেটিং এ তিনটি পক্ষ কাজ করে-
- মার্চেন্ট বা বিক্রেতা – যে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পণ্য/সেবা বিক্রয় করে থাকে
- কাস্টমার বা ক্রেতা – যারা মার্চেন্টের সেই সকল পণ্য/সেবা ক্রয় করে থাকে
- অ্যাফিলিয়েট বা প্রমোটার – তারা মার্চেন্টের তৈরিকৃত পণ্য/সেবা কাস্টমারের কাছে মার্কেটিং করে এবং কাস্টমার সেই পণ্য/সেবা কিনলে অ্যাফিলিয়েটরা মার্চেন্টদের নিকট হতে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পায়।
কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন?
যেকোন প্রতিষ্ঠানের অ্যাফিলিয়েট হয়ে মার্কেটিং করতে হলে তাদের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন, তাদের রুলস মেনে প্রমোশন ও নিশ (যে টপিকে কাজ করতে চান) ধরে আগাতে হবে। আপনাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি বিবেচণা করতে হবে। একটি সুন্দর প্রমোশনের জন্য আপনার প্ল্যানিংও সুন্দর হওয়া আবশ্যক।
অ্যাফিলিয়েট রেজিস্ট্রেশন
অ্যাফিলিয়েট হয়ে মার্কেটিং করতে হলে যে মার্চেন্টের পন্য/সেবা আপনি বিক্রয় করবেন সে মার্চেন্ট আপনাকে একটি লিংক প্রদান করবে। প্রত্যেক অ্যাফিলিয়েট আলাদা আলাদা লিংক পাবে। সেই লিংকে গিয়ে কেউ যদি কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ক্রয় করে তবে তার কমিশন অ্যাফিলিয়েটের একাউন্টে জমা হবে। যেমন আপনি এমাজন এফিলিয়েট করলে প্রোডাক্টের ছবি ও লিংক নেয়ার জন্য Amazon SiteStripe ইউজ করতে হবে। শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন করার পরেই এই সুবিধা পাবেন।
বিভিন্ন মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ
মার্কেটিং করতে হলে অবশ্যই আপনার হাতে কিছু হাতিয়ার লাগবে, আপনার হাতিয়ারগুলো যত শক্তিশালী হলে আপনার বিক্রয় ঠিক ততটাই সহজ হবে। অ্যাফিলিয়েট হয়ে মার্কেটিং করতে হলে আপনার প্রয়োজন হবে-
– একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট
– একটি ইউটিউব চ্যানেল
– সোশ্যাল মিডিয়া পেজ (যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি)
ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ সবগুলোই যে বাধ্যতামূলক থাকা লাগবে ব্যাপারটি এমন নয়। তবে যত বেশি চ্যানেল বা মিডিয়া আপনার হাতে থাকবে তত বেশি মার্কেটিং এর সুযোগ আপনি পাবেন।
অনালাইন প্রমোশন বা ডিজিটাল মার্কেটিং
যেনে রাখা প্রয়োজন শুধু ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থাকলেই হবে না। প্রচুর ভিজিটরকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ভিজিটর না আসলে কখোনই সেলস বাড়বে না। আর ভিজিটর আনতে গেলে আপনাকে জানতে হবে বেসিক ডিজিটাল মার্কেটিং যেমন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইউটিউব মার্কেটিং ইত্যাদি। অর্থাৎ আপনাকে করতে হবে-
– ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জন্য ভাল মানের কন্টেন
– ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভাল মানের ভিডিও এবং
– সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়মিত পোস্ট
নিশ সাইট তৈরি করা
নিশ বলতে বুঝায় ক্যাটাগরি বা বিষয়বস্তু। অ্যাফিলিয়েট বা সম্বন্ধ মার্কেটিংয়ে বিভিন্ন কোম্পানির বহু ক্যাটাগরির অসংখ্য প্রোডাক্ট আছে। আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন ক্যাটাগরির কোন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন। মনে রাখেবেন একসাথে অনেকগুলো ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করলে কোনটার মার্কেটিংই সঠিকভাবে করতে পারবেন না। যেমন ধরুন আপনি ইলেক্ট্রনিক্স ক্যাটাগরি সিলেক্ট করেছেন, সেখান থেকে আপনি টেলিভিশন হচ্ছে একটা নিশ। তাই আপনার এখন কাজ হবে যেকোন একটি নিশ সিলেক্ট করে উক্ত নিশ রিলেটেড একটি ওয়েবসাইট বানানো।
এখন আপনার কাজ হবে সেই নিশে প্রচুর পরিমাণে কোয়ালিটি আর্টিকেল পাবলিশ করা। আপনার কাজ হবে শুধু টেলিভিশন বা আপনার নিশের উপরই অন্তন্ত ৫০+ কন্টেন্ট পাবলিশ করা। সপ্তাহে অন্তত তিনটা কন্টেন্ট পাবলিশ করতে হবে। এই কন্টেন্ট পাবলিশের ধারা নিয়মিতভাবে ধরে রাখতে হবে। প্রপার এসইও করলে ও টপিক রিলেটেড আর্টিকেল লিখতে থাকলে সেই টপিকের উপর অথোরিটি অর্জন হবে। ফলে গুগলে র্যাংক করা ইজি হবে।
মার্কেটপ্লেস ও প্রোডাক্ট সিলেকশন
অ্যাফিলিয়েট বা সম্বন্ধ মার্কেটিংয়ের অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস আছে। আপনি সেখান থেকে যেকনো একটা মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন। মনে রাখবেন একাধিক মার্কেটপ্লেসে কাজ করার চেয়ে একটি মার্কেটপ্লেসে কাজ করাই উত্তম হবে। তবে সবসময়ই মার্কেটপ্লেস সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে Amazon এফিলিয়েট থাকে সবার পছন্দের শীর্ষে।
এমাজন এফিলিয়েট ছাড়া অন্য বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিস সেল করার জন্য বিগেনারদের বেস্ট মার্কেটপ্লেস হচ্ছে ClickBank.com তা ছাড়াও আছে ClickBetter.com, Payspree.com, PayDot.com, ClickSure.com, VIPAffiliates.com, TwistDigital.com, LinkShare.com, Cj.com, ইত্যাদি । যে মার্কেটপ্লেসে কাজ করবেন সেই মার্কেটপ্লেস এর অফিসিয়াল YouTube চ্যানেল বেশ ভালো কিছু টিউটোরিয়াল পাবেন। এসব টিউটোরিয়াল আপনার কাজকে সহজ করে দিবে।
এবার আসি প্রোডাক্ট সিলেকশন। প্রোডাক্ট সিলেকশনের প্রতি আপানকে দেখতে হবে ঐ প্রোডাক্টে কমিশনের হার কত এবং প্রোডাক্টটি মার্কেটে বেশ ভালো চলছে কিনা। সুতরাং রিসার্চ করে বের করে ফেলুন কোন প্রোডাক্টগুলোর অনলাইনে কাটতি বেশি ও মানুষ নিয়মিত অনলাইন থেকে ক্রয় করে।
জানতে হবে বেসিক ডিজিটাল মার্কেটিং
আপনি কস্ট করে টাকাপয়সা খরচ করে ওয়েবসাইট বানালেন, ওয়েবসাইটের জন্য ইউনিক সব কন্টেন লিখলেন, ওয়েসসাইট ডিজাইন করলেন তাছাড়াও ইউটিউব ভিডিও বানালেন এবং সোশ্যল মিডিয়াতেও পেজ অপেন করলেন। কিন্ত কোন কিছুই কাজে আসবে না আপনি যদি এসব ওয়েবসাইট/ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়ার মার্কেটিং করতে না পারেন। কারন মানুষ আপনার চ্যানেলে না আসলে আপনি কার কাছে মার্কেটিং করবেন? তাই আপনার জানা উচিত-
– ইমেইল মার্কেটিং (অপশনাল)
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কি পরিমাণ আয় করা সম্ভব?
এখানে কয়েকটি ব্যাপারের উপর ভিত্তি করে বলা যাবে আয়ের হার বা পরিমাণ কি রকম হবে। যেমন-
– প্রোডাক্টে কমিশনের হার কত
– প্রতি ইউনিট প্রোডাক্টের মূল্য কত
– আপনি কত ইউনিট প্রোডাক্ট সেল করতে পেরেছেন
– মোট বিক্রয়কৃত প্রোডক্টের মূল্য কেমন
আমরা আগেই বলেছি আয়ের কোন লিমিট নেই, আপনি যত বেশি সেলস জেনারেট করতে পারবেন তত বেশি কমিশন পাবেন। অনেক মার্কেটার আছে হয়তো মাসে ৩-৪ লক্ষ টাকা আয় করে আবার কেউ এক টাকাও আয় করতে পারে না। সুতরাং পুরোটাই একটা আপেক্ষিক বিষয় ভাগ্যের তো বটেই।
ধরা যাক, একটি পণ্যের মূল্য ২০,০০০ টাকা, বিক্রয়ের উপর কমিশনের হার ৫%। আপনার বিক্রয়ের পরিমাণ ১০০ ইউনিট।
তাহলে আপনার আয় হবে-
২০,০০০ × ১০০= ২০,০০,০০০ × ৫% = ১,০০,০০০ টাকা।
অনলাইনে হাজারো অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে তাহলে অ্যামাজন কেন?
এক্ষেত্রে বলে রাখি অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের চেয়ে অ্যামাজনের কমিশনের হার কম। তারপরও মার্কেটাররা অ্যামাজনের উপর আস্থা রাখে। এর সহজ উত্তর হচ্ছে অ্যামাজন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস ও গ্রাহকদের কাছে সবচেয়ে বেশি গ্রহনীয় ও গ্রাহকদের একটা সফট কর্নার কাজ করে। ফলে অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের প্রোডাক্টের চেয়ে অ্যামাজনের প্রোডাক্ট বিক্রি হয় বেশি। অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের মার্কেটিং করলে দেখা যায় ট্রাফিক (ভিজিটর) যে পরিমানে আসে সে পরিমানে সেলস জেনারেট হয় না। কিন্ত অ্যামাজনের কনভার্সন রেট অনেক বেশি ফলে কম ট্রাফিকেও ভালো সেলস জেনারেট হয়।
একটিভ ইনকাম বনাম প্যাসিভ ইনকাম
ধরুন, আপনি ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ সবগুলোই তৈরি করে রানিং করে দিলেন। কোন মাসে আপনি মার্কেটিং না করলেও আপনার চ্যানেলগুলোতে ভিজিটর আসলো ও আপনার পন্য বা সেবা ক্রয় করলো তবুও আপনি কমিশন পাবেন।
তথ্যসুত্রঃ জানতে ক্লিক করুন Affiliate Program Amazon
পরিশেষে বলি
অ্যাফিলিয়েট বা সম্বন্ধ মার্কেটিং শিখতে হলে প্রথম ৩ মাস ইউটিউব ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে ও বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে আইডিয়া নিন। সেক্ষেত্রে আমাদের ডিজিটাল মার্কেটিং ও অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ে দেখতে পারেন। আর যেকোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আপনি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।
0 Comments